এসএমই (স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ) তিনটি ইংরেজি শব্দের প্রথম অক্ষর। এখানে এস বলতে
স্মল অর্থাৎ ক্ষুদ্র, এম হলো মিডিয়াম অর্থাৎ মাঝারি এবং ই বলতে এন্টারপ্রাইজ অর্থাৎ শিল্প উদ্যোগ
বোঝায়। কাজেই এসএমই হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগ।
কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ (সিএমএসএমই) খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এ খাতে
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) অর্জনে সিএমএসএমই খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির
বিকল্প নেই। জাতিসংঘে অনুমোদিত এসডিজি ও গ্লোবাল রোডম্যাপ-২০৩০-এ নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি
বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের সহায়ক জামানত ছাড়া ব্যক্তিগত গ্যারান্টির
বিপরীতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা প্রদান, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে পুনঃঅর্থায়নের ব্যবস্থা
গ্রহণ, গ্রুপভিত্তিক ঋণ সুবিধা প্রদান, ঋণ আবেদন স্বল্প সময়ে প্রক্রিয়াকরণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া
হয়েছে। আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। তবে এ নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তার সংখ্যা খুবই
নগণ্য। প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় অনেক কম। দেশের
টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অর্থনীতির মূল স্রোতে নারীদের অংশগ্রহণ আবশ্যক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজগুলোর
উল্লেখযোগ্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ খাত শ্রমঘন এবং উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি
ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দ্রুত অবদান রাখতে সক্ষম। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো বিশেষ করে চরম দারিদ্র্য
ও ক্ষুধা নির্মূল করা এবং নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে এ খাত ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
এশিয়ার বেশকিছু সমৃদ্ধশালী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশও এসএমইর ওপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করছে। তাদের দৃষ্টিতে এসএমই
হচ্ছে Employment Generating Machine এবং সে কারণেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয়বৈষম্য
কমিয়ে আনা, দারিদ্র্য বিমোচন প্রভৃতি লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের
উন্নয়নকে বেছে নিয়েছে। বর্তমান সরকারও এসএমই খাতের উন্নয়নকে শিল্পায়নের চালিকা শক্তি হিসেবে
গ্রহণ করে এ খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি শিল্প খাত। আর শিল্প খাত প্রাথমিক
পর্যায়ে গড়ে ওঠে এক বা একাধিক ব্যক্তি উদ্যোক্তার সমন্বয়ে। ক্ষুদ্র থেকেই বৃহৎ সৃষ্টি হয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি
শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে রূপ নেয় বৃহৎ শিল্পের। ফলে বিশ্বের শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে টেকসই
শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবদান বেশি। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে
সুষ্ঠু শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তথা এসএমইর কোনো বিকল্প নেই। নব্বইয়ের দশকে প্রথমে
স্বল্প পরিসরে এ দেশে এসএমই কর্মকাণ্ড শুরু হয়। প্রতিটি উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে রফতানি আয়ের
একটি বড় মাধ্যম হচ্ছে এ খাত।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের বিকাশই হচ্ছে বিশ্বের সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি। উদীয়মান
অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির মৌল কাঠামো বিনির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম মৌলিক
নিয়ামক হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উন্নয়ন। এ মুহূর্তে এসএমই খাত দেশের সার্বিক উন্নয়নে মুখ্য
ভূমিকা পালন করছে। বিশেষত কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন, উৎপাদন বৃদ্ধি, আমদানি
নির্ভরতা হ্রাস,নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে এসএমই খাতের ভূমিকা
অনস্বীকার্য। এসব উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এসএমই খাতের গুরুত্ব
বিবেচনায় নিয়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এসএমই
খাতে বিনিয়োগে কার্যকর ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রতিটি সাফল্যের পেছনে থাকে দৃঢ় অঙ্গীকার,
অপরিসীম ধৈর্য ও মনোবল। আমাদের নারী উদ্যোক্তারা তাদের অঙ্গীকার, মনোবল আর সাহসকে কাজে
লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে চলেছেন। আশার কথা হলো, আমাদের নারীসমাজের নিষ্ঠা,
উদ্ভাবনী শক্তি ও শ্রম নিপুণতার কারণে অর্থনীতির মূল স্রোতে তাদের অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে।
নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান, দেশজ শিল্পায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পুঁজি ও শিক্ষার অভাব, সামাজিক ও পারিবারিক বাধা, পণ্য বাজারজাত
ইত্যাদি সমস্যা দূরীভূত করা হলে এ দেশে নারী শিল্পোদ্যোগের বিকাশ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত হবে।


