কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে এসএমইর ভূমিকা

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি শিল্প খাত। আর শিল্প খাত প্রাথমিক পর্যায়ে গড়ে ওঠে এক বা একাধিক ব্যক্তি-উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে। ক্ষুদ্র থেকেই বৃহৎ সৃষ্টি হয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে রূপ নেয় বৃহৎ শিল্পের। ফলে বিশ্বের শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে টেকসইশিল্পায়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবদান বেশি। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠ শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তথা এসএমই’র কোন বিকল্প নেই।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সব থেকে বেশি ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান জানান দেশের মোট উৎপাদনের ৩০ শতাংশ এবং মোট কর্মসংস্থানের ২৫ শতাংশই এসএমই খাতে। তাই দেশের সুষ্ঠু উন্নয়ন ও মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে এসএমই খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া জরুরী বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে সে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের অবদান অপরিসীম। এসএমই প্রতিষ্ঠান সে দেশের ৭০ শতাংশ চাকরির যোগানদাতা এবং উৎপাদিত পণ্যের ৫৬ শতাংশ মূল্য সংযোজন হয় এসএমই প্রতিষ্ঠান থেকে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির মৌল কাঠামো বিনির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম মৌলিক নিয়ামক হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উন্নয়ন। এই মুহূর্তে এসএমই খাত দেশের সার্বিক উন্নয়নে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। বিশেষতঃ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচন, উৎপাদন বৃদ্ধি, আমদানি নির্ভরতা হরাস, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে এসএমইখাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান এবং আয়ের সুযোগ বেশি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শক্তির ব্যবহারও অপেক্ষাকৃত কম এবং পরিবেশ দূষণও কম মাত্রায় হয়।

বেকারত্বের কারণে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। দেশে উচ্চশিক্ষিতের হার বাড়ছে, একই সঙ্গে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা।দেশের অর্থনীতিতে যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সে হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। এ সুযোগ সৃষ্টি এসএমই খাতে সম্ভব। কর্মসংস্থানের গতি বাড়াতে বিশ্বব্যাংক থেকে সরকার ৭৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিচ্ছে। এ অর্থ যদি এসএমই খাতে যথাযথভাবে বিনিয়োগ করা যায়, তাহলে দেশে বিরাট কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯৯ শতাংশ যেখানে এসএমই খাতের অন্তর্ভুক্ত, তখন বলার অপেক্ষা রাখে না এ খাত জাতীয় অর্থনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আওতা বর্ধিত করার উদ্দেশ্যে জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬-এর আলোকে শিল্প ও সেবা খাতের কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ট্রেডিং খাতের মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের সংজ্ঞা এবং ঋণসীমা পুনর্নির্ধারণ করে এ খাতকে এখন সিএমএসএমইতে রূপান্তর করা হয়েছে। এসএমই মানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এখন এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কটেজ, মাইক্রো, স্মল, মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজগুলোকেও, সব মিলিয়ে সিএমএসএমই।

বর্তমানে এ খাতের মাধ্যমেই অর্জিত হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদনের ২৫ শতাংশ। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও সিএমএসএমই খাত অনেক এগিয়ে আছে। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ এ খাতেই নিয়োজিত। অন্যদিকে শিল্প কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশে অবদান রাখছে সিএমএসএমই খাত। দেশের জনসংখ্যাকে কাজে লাগানোর জন্য কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট উপকারী। আগেই বলা হয়েছে, এটি শ্রমঘন এবং এর উৎপাদন সময়কাল কম। আর তাই এ খাতকে জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে এবং অধিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *