অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংজ্ঞা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। বিভিন্নজন তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে একে ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট হয়েছেন। তবে সাধারণভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে কোন দেশের জনগনের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে প্রকৃত জাতীয় আয় বৃদ্ধিকে বোঝায়;যা আয়-ব্যয় হ্রাসে অব্যাহত অবদান রাখে, ক্রমবর্ধমান হারে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে এবং সর্বোপরি মানুষের জীবন যাপনের মান উন্নয়নে সদা তৎপর থাকে।
Williams and Patrick –এর মতে, ‘দীর্ঘ সময় ব্যাপি কোন দেশ বা অঞ্চলের জনগনের মাথাপিছু উৎপাদন ও সেবার অব্যাহত বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলা হয়।’
Professor Snider- এর মতে, ‘মাথাপিছু উৎপাদন ক্ষমতার দীর্ঘমেয়াদি বা অব্যাহত বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলা হয়।’
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ইয়ংয়ের মতে, ‘উন্নয়ন হলো কোন ব্যক্তি বা সমাজের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও অগ্রগতির একটি জটিল প্রক্রিয়া।’
অর্থাৎ সংক্ষেপে বলা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো একটি প্রক্রিয়া বা চলনশীল গতি, যার দ্বারা দীর্ঘকালীন মেয়াদে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রকৃত জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তিত হয় এবং সমাজে নতুন তর গতিবেগ সৃষ্টি হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল নির্ধারক সমূহ হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ, পুঁজির সরবরাহ,সংগঠন ও সংগঠক, প্রকৌশল গত ও কারিগরি উন্নতি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অথনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায়সমূহ:
বাংলাদেশের অর্থনীতির অনেক সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে কতকগুলো হলো একেবারে মৌলিক সমস্যা। যতদিন পর্যন্ত এগুলোর সমাধান করা না হবে ততদিন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে না। নিম্নে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান সমস্যাগুলো আলোচনা করা হলো-
রাজনৈতিক অস্থিরতা:
অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কোন সরকারই শান্তিতে কাজ করতে পারছে না। হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও , ভাঙচুর প্রভৃতি অর্থনীতির চাকা অচল করে দেয়। বিভিন্ন দাবিতে বিরোধী দলগুলোর সংসদে যোগ না দেয়া এবং সংসদের বাইরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিভিন্ন হিসাব থেকে দেখা যায় যে, একদিনের হরতালে ক্ষতি হয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। তাছাড়া দেশে বিদেশী বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর রয়েছে এর সুদূর প্রসারী প্রভাব। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
অনুন্নত কৃষি ব্যবস্থা:
বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের ৩০শতাংশেরও বেশি আসে কৃষি খাত থেকে। তাছাড়া দেশের ৮৫ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমদের কৃষি ব্যবস্থা গতানুগতিক বা মান্ধাতার আমলের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলেও তার গতি অনেক শিথিল। তাছাড়া কৃষি উপকরন, যেমন- উফশী বীজ, সার কীটনাশক, সেচ যন্ত্রপাতি প্রভৃতির উচ্চমূল্যেও কারণে আমাদের দেশের দরিদ্র কৃষকদেরও পক্ষে এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তদুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কৃষকদের কষ্টার্জিত ফসল রক্ষর কোনো ব্যবস্থা আজও উদ্ভাবিত হয়নি। অনুন্নত কৃষি ব্যবস্থার কারণে নিম্ন ফলন, অধিক উৎপাদন ব্যয় প্রভৃতি কারণে কৃষিখাত অর্থনৈতিক উন্নয়নে আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে পারছে না।
দারিদ্র্য:
দারিদ্র্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক বিরাট অন্তরায়। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫.১ শতাংশ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছে। ১৯৯০-৯১ সালের ৪৯.৭ শতাংশ দারিদ্র্য কমে ২০০৯-১০ সালে ৪০ শতাংশে দাঁড়ালেও দরিদ্র জনসংখ্যা এখনও অত্যধিক। এ বিপুল জনসংখ্যার অন্ন, বস্ত্র , বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য বিপুল পরিমানের অর্থের প্রয়োজন, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বিরাট বাধা।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি:
বাংলাদেশের মাত্র ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় প্রায় ১৬ কোটি মানুষ বাস করে। অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১০৮৪ জনের মতো মানুষ বাস করে। এ বিপুল জনসংখ্যা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা,যানবাহন, চিকিৎসাসহ অর্থনৈতিক , সামাজিক ও রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এমতাবস্থায় দেশের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান কমে যায় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যহত হয়।
অশিক্ষিত ও অদক্ষ জনশক্তি:
বাংলাদেশে যে বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে তার বেশির ভাগই অশিক্ষিত । আর শিক্ষার অভাবে তাদের অধিকাংশ অদক্ষ । বর্তমানে দেশে শিক্ষার হার প্রায় ৫৫ শতাংশ বলা হলেও এদের একটা বড় অংশ নাম স্বাক্ষর করতে জানে না।ফলে অশিক্ষা ও অদক্ষতার কারণে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদেরও পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিৎ করা যাচ্ছে না বা আধুনিক প্রযুক্তির যে বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে তাতে অংশ নেয়া বা তার সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। আর অশিক্ষিত থাকার কারণে দেশের অধিকাংশ লোক অদক্ষও। ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি শিথিল হয়ে যাচ্ছে।
দুর্বল অবকাঠামো:
দুর্বল অবকাঠামো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অনুন্নয়নের আরেকটি অন্যতম কারণ। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তা থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা অর্জন করা ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নেই। তাই উৎপাদন ও রপ্তানির ব্যয়বাহুল্য হ্রাসের জন্য জরুরী ভিত্তিতে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশে বিশেষ করে পরিবহনের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট সংযোগ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাকরণ, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের উন্নয়ন, কন্টেইনার টারমিনাল নির্মাণ ইত্যাদি আবশ্যক। এগুলোর ব্যবস্থা না করলে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারী পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। তাইতো বিশ্বব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর শেষে অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকাশের পথে প্রধান অন্তরায় বলে মন্তব্য করেন।
শিল্পের অনগ্রসরতা:
এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আরেকটি বড় বাধা। উন্নত রাষ্ট্রগুলোর জিডিপির একটি বড় অংশ আসে শিল্প খাত থেকে। অন্যদিকে আমাদের জিডিপির সিংহভাগ আসে কৃষি খাত থেকে। বিভিন্ন কারণে আশানুরূপ বিদেশি বিনিয়োগ না হওয়ায় শিল্পের বিস্তার ঘটছে না। এতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি না পেয়ে বরং হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৯০- এর দশকে প্রথম আট বছরে শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ, ১৯৯৯-২০০০ সালে ৪.২ শতাংশ এবং ২০০৮-০৯ সালে ৬.৬৮ শতাংশ হয়েছে। শিল্পের বিস্তার দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রপ্তানি বৃদ্ধি করে থাকে। তাই শিল্পের অনগ্রসরতা অর্থনীতিকে অগ্রসর হতে দেয় না।
স্বল্প মাথাপিছু আয়:
বাংলাদেশের জনগনের মাথাপিছু আয় খুবই কম মাত্র ৭৫০ মার্কিন ডলারের মতো। এই স্বল্প আয় আবার সুষমভাবে বন্টিত নয়। স্বল্প আয়ের ফলে জনগনের সঞ্চয় ও বিনিয়োগের হার ও কম। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘স্বল্প আয়- স্বল্প বিনিয়োগ- স্বল্প উৎপাদন- স্বল্প আয়’-এর দুষ্ট চক্রে আবর্তিত হচ্ছে। তাই এখানে জীবনযাত্রার মান নিচু এবং দারিদ্র্যেও সাথে মানুষের নিত্য বসবাস। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য ১৬-২০ শতাংশ জাতীয় সঞ্চয় দরকার;অথচ আমাদেরও জাতীয় সঞ্চয়ের পরিমাণ মাত্র ৮ শতাংশ।
আমদানি নির্ভরতা:
বহির্বাণিজ্য দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা মোটেই সুবিধাজনক নয়। বাংলাদেশ যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি বিদেশ থেকে আমদানি করে। ফলে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য বাংলাদেশের প্রতিকূলে চলে যায়। কাজেই দেখা যাচ্ছে, প্রতিকূল বৈদেশিক বাণিজ্য বাংলাদেশের আরেকটি মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা।
বৈদেশিক সাহায্য:
বৈদেশিক সাহায্য তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনুন্নয়নের অন্যতম কারণ। তথাপি তারা বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ না করে পারে না। কিন্তু এর বিরাট অংশ পুনরায় দাতাদেশের পকেটে ফেরত চলে যায়। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ,আইডিবি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান সাহায্য প্রদানের সাথে সাথে তাদেরও স্বার্থ উদ্ধারকারী বিভিন্ন শর্ত চাপিয়ে দেয়, তা গ্রহীতা দেশের জন্য যতই প্রতিকূল হোক না কেন। ফলে আমাদের নিজেদের উন্নয়ন উপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ব্যহত হচ্ছে। আর এভাবে অথনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে বাধাগ্রস্ত।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এক কালো অমানিশার মতো। এমনিতেই দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল তার ওপর প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত সে ভিত্তিকে আরো দুর্বল ও এলামেলো করে দিচ্ছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, জলোচ্ছাস, খরা এবং বর্তমানে আর্সেনিক দূষণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ এর মতো। ১৯৮৮,৮৯,৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যা ১৯৯১ সালের জলোচ্ছাস, ২০০৭ সালের সিডর এবং ২০০৮ সালের রেশমি এবং এর পরবর্তীতে আইলা হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। ভেঙ্গে ফেলেছে বা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে দেশের শতশত মাইল রা¯Í-ঘাট, শতশত পুল, কালভার্ট, সেতু ও হাজার হাজার ঘর-বাড়ি। এর ফলে দেশের অর্থনীতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা সামাল দিতে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা ভেঙ্গে যাচ্ছে।
ঋণখেলাপীদের দৌরাত্ম :
ঋণ খেলাপীদের দৌরাত্ম বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো চেপে বসেছে। এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এসব ঋণ গ্রহীতা নানা প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে শিল্প স্থাপনের নামে ব্যাংক থেকে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এবং নির্ধারিত খাতে ব্যয় না করে অন্যান্য অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করে। এই বিপুল পরিমাণ ঋণের টাকা নিয়মিত পরিশোধ হলে পুনর্বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি লাভবান হতে পারত।
আইন-শৃঙ্খলার অবনতি :
বাংলাদেশের বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মোটেও অনুকূল নয়। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি , খুন, অপহরণ, ঘুষ, গুপ্ত হত্যা, দুর্নীতি সামজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যা অনেক বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারী বিমান বন্দর থেকে দেশে ফিরে যায়। এ অবস্থা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কেবল হতাশাজনকই নয় , আমাদের জন্য লজ্জাজনকও বটে।
দুর্নীতি :
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ব্যবস্থা এক অপরিহার্য শর্ত। কিন্তু এটি যেন আজ আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে । ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ এগোতে চায়না। ফলে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা নিলেও সেগুলো সময় মতো বা¯Íবায়িত হচ্ছেনা। এতে একদিকে যেমন উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দুর্নীতির কারণে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারীরাও এদেশে তাদের পুঁজি বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন কাস্টমস চেক পয়েন্টে দুর্নীতির কারণে বিদেশী পর্যটকরা এদেশে আসতে অনীহা প্রকাশ করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও দেশের অর্থনীতি। এক সেমিনারে দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনীতিবিদ জন উইলিয়ামসনের বক্তব্য ছিল- বাংলাদশের দুর্নীতি একধাপ কমাতে পারলে বিনিয়োগ বাড়বে জিডিপির ৪ শতাংশ এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধিও হার বাড়বে ০.৫ শতাংশ। এখানে উলেখ্য যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক রির্পোট অনুযায়ী বাংলাদেশ দুর্নীতে বিশ্বে বেশ কয়েকবার প্রথম স্থান দখল করেছে। এটি নিশ্চিতভাবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
শ্রমিকদের ধর্মঘট, হরতাল অবরোধ ইত্যাদি:
কল-কারখানা ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক সংগঠনগুলোর অবৈধ কার্যকলাপের ফলে কল কারখানায় কর্ম বিরতি হরতাল কাজে ফাঁকি দেয়া এগুলো লেগেই থাকে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপদন হ্রাস পায়, উৎপাদন হ্রাস পেলে লাভজনক শিল্প লোকসান দিতে থাকে। কোন কোন সময় মালিকরা তাদেরও শিল্প করাখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এভবে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বেকার সমস্যা:
দেশে প্রায় দুই কোটি লোক বেকার রয়েছে। ফলে এরা দেশের অর্থনীতিতে কোন অবদান রাখতে পরছেনা। এ বিশাল জনসংখ্যাকে এভবে বেকার রেখে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভবনা।কারণ এরা অনুৎপাদনশীল থাকলেও এদের জন্য সরকারকে অন্ন , বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। অর্থাৎ দেশের বেকার জনগোষ্ঠি উৎপাদন কর্মকান্ডে জড়িত না থাকলেও তাদেরও আহার ও বাসস্থানের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতির উপর চাপ বাড়ছে। সমস্যা যখন তীব্র হয় তখন দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। একমনকি শাসন তান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি সহ আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। অতএব দেখা যাচ্ছে বেকার সমস্যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বিরাট বাধা।


